ছাত্র জনতার বিপ্লবের শততম দিন ও আমজনতার ভাবনা

লেখক: মোঃ আসাদুজ্জামান

ছাত্র জাগরণের ইতিহাসের শততীর দিনে ফিরে দেশের মানুষকে মাঝে মাঝেই অতীতচারণ, স্মৃতিচারণ করতে হয় একটা ক্ষণ্ঠে গৌরবের অনুভূতির টানে। সবাই গর্ববোধ করেন অংশগ্রহণের জন্য, হলে, ক্লাসে, পিচঢালা সড়কে, রাজপথে, কোথাও, কখনও, কোনো মুহূর্তে। নির্বাচনের কয়েকটি কেন্দ্র ছাড়া কোথাও নির্বাচন উপলক্ষে তেমন কিছুই হচ্ছে না। প্রচারণা থেকে মুক্তি পাবে জনগণ। অন্য দিক নির্বাচন কি আদৌ হচ্ছে?

ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচন হচ্ছে। আর ভোটারদের মধ্যে একধরনের নির্বিকার, নীরবতা, একপ্রকার ক্লান্তিকর অসহায়ত্বের বহিঃপ্রকাশ। তারা কি ভুলে গেছে পূর্বের ফ্যাসিবাদ? নাকি নতুন দুঃসহ বর্বরতা দেখেছে তারা?

আজকের একতরফা ক্ষমতা যাঁদের হাতে, তারা একবারও ভাবতে পারছেন না, নিপীড়ন চললে ছোট ছোট বিক্ষোভ বড় আন্দোলন হয়ে ওঠে। কিংবা অতীতের মতো আবারো একটা ঐক্যবদ্ধ নির্বাচন করার শক্তি তাদের নেই বলেই চুপচাপ।

এর বাইরে একটি অংশ ভোটের প্রার্থী খুঁজছে, যাকে ভোট দিয়ে তারা কিছুটা হলেও ব্যক্তিগত নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পাবে।

প্রশ্ন হলো তাহলে এই বিপুল ছাত্র জনতার জাগরণ, এই বিদ্রোহ, প্রতিবাদ হবে? ছাত্রজীবনটা জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়, কল্পনা ও প্রেমদোলায় দোলার সোনালি সীমান্ত?

এই অজস্র অত্যাচার সহ্য করে বলতে হবে না সেদিনের বিদ্রোহ ছিল বিভ্রমের পরিণাম। কে বলবে, বিদ্রোহের সেই দিনগুলো ছিল একটা রোদের মতো পাহারা? বিশ্ববিদ্যালয়ের বনলতা হিমু, শুভ্রের বিদ্রোহ ছিল না নিছক কল্পনা? বিদ্রোহের সেই দিনগুলো কি ছিল শুধুই বিভ্রম? ইরফানুল ইসলাম বা খোমেনি, বিশপ ডেসমন্ড টুটু। কিন্তু বাংলাদেশের আশি, নব্বই, ২৪ এর ছাত্রজাগরণ হয়েছে। এটা মোটেও কোনো পিতার নামধারী নেতৃত্বের নির্লজ্জতায় যোগদান নিয়ে মাতামাতি করার জন্য ঠিক না বরং কল্যাণে তা ক্রমেই ঝলসাতে হয়ে পড়ছে।

দেশ থেকে নিয়ন্ত্রণকারী প্রধানমন্ত্রী ও তার পরাশক্তি রোষানলে নির্ভরশীল সেবাদানকারী কতক মিডিয়া মিলেমিশে যারা ছিলেন একদিন ছাত্রজাগরণে, তাদের কি মনে পড়ে? এখন তো সবাই বলছেন, ভুল হয়েছে। পরবর্তীকালে আত্মপক্ষ রত ছাত্র জনতা বিচ্যুতির শিকার হয়েছে। প্রায় সকলেই ছাত্রজীবনের কোনো রাজনীতিকে দলে দলভুক্ত করেছে। এর মাঝে শুধু যারা ঠিক থাকতে পেরেছে আর শান্ত থাকাতে আহ্বান জানিয়েছে।

এখানে বিভ্রান্তি তো কিছু দেখি না। কি ছিল, কি ছিল না, কি আদান কেন কীছু তো নেই।

তবে এটা কিছু সন্ন্যাসীদের নিস্পৃহতা কিংবা হতাশা নয়। বরং বিচ্যুতির চিহ্নগুলো ছিল। আসলে প্রতিবাদের চিহ্নগুলো।

ছাত্রজনতার মাঝে যাদের অন্তরে অন্তরে ছিল তারা এখন নানাভাবে বলছেন, অতীত ভুল ছিল না। আজকের অসহায়ত্বকে একটু সাহসী দাবি দেওয়ার মতো নৈতিকতা সচেতনতা আছে।

যারা এমন কথাগুলো বলছে তারা সুবিধাভোগী না হয় খোলসধারী বা উদ্যমশূন্য মহাত্মাদের এসডব্লিউ।

এটা কেন বুঝার চেষ্টা করেন না যে এটা হচ্ছে রাষ্ট্রের সরকার বা রাষ্ট্রচ্যুত সরকারের মধ্যে পার্থক্যতুল্য ও সরকারহীন সৃষ্টির ক্ষণ।

কিন্তু যদি এটা বুঝে ওঠা যেত, তাহলে আপনাদের নির্ধারিত সেই সরকারগুলো যা প্রত্যাশিত পারতেন তা আনুষ্ঠানিকতা রূপেই থাকত না।

কিন্তু এখন তো ছাত্রজনতা সবসময় রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করে।

১। প্রত্যেক প্রার্থীর মানুষদের একটা আংশিক কাহিনি আছে।
২। তারা দেশে নানা ধরনের শিষ্টাচারহীনতা, এবং যন্ত্রণার কারণ।
৩। রাজনৈতিক দলের চিঠি ছাড়া তাদের প্রার্থিতা গ্রহণযোগ্য নয়।
৪। আমাদের মতে ফাইনালি কোনো ব্যবস্থার সময় নেই করার মতো সময় তাদের নেই।
৫। মানুষ হতাশ। হওয়ার অতিরিক্ত। অলপ পয়সায় টোটো মিলে করে না প্রাণপণে দেশ সুন্দর না বানালে বা পাওয়া গেলে লাঠি খাওয়ার এই অনিশ্চয়তা আর কি?

যারা ফরমালি ভোটে দাঁড়ায় তারা অতীতেও কি কল্যাণে ছিল? প্রতিদিন তোই করতেন তাদের লিখিত বিদ্রোহের কর্মপন্থা দিন। তাহলে কিভাবে ভয়ংকর বিভাজন তৈরি হবে, রাষ্ট্রিক হত্যায় ছিন্ন বিচারে কুল কিনারা নেই, পুলিশের মানুষকে হরহামেশা দেখা যায় না। নেক ভয় নিয়ে ফিরতে হয় ঘরে। বাসায়। এটাই জনজীবনের জানান।

রাজনীতি টাকার কামানগুলোর একটি সঙ্কর পথ। বিশেষ করে মানুষ এখন মনে করে।

যেমন করে মুদ্রা-স্বর্ণ, সুবর্ণ রাজনীতিকে করে নির্ধারণ তার নিজস্ব কল্যাণের ভিত্তিক করে এবং এসডব্লিউ হিসেবে করতেন। বুদ্ধিজীবী মহলটি অনুরূপভাবে বা টাকার জায়গায় মূল্যবোধ বা নীতি নাই বলে চেনা রাজনীতিও করি। এভাবেই।

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে: কিভাবে ভোট করবে? কোথায় করবে? ভোটকেন্দ্র কোথায়? কিভাবে নিরাপত্তা মিলবে? প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে কিনা? নাকি আরো গ্রহণযোগ্যতা আছে কিনা? এর কোনো উত্তর নেই।

কোনো আর প্রার্থীও তো হলো না। হালিমা বিদায় হয়েছে নির্দয়ভাবে সরকার। রাষ্ট্র। আইন খুনখারির ঠিক করলেই চলে। এদিকে বিচারহীন হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্ত বিচার, আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা। বরং এসব সরকারকে বেশি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি, বিচারমন্ত্রি সমন্বয়ে বিভিন্ন প্রতিস্থাপনে ইস্তিরা।

যারা বলছেন জাতীয়তাবাদ, সংবিধান, ২৪ সালের ইতিহাস, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি এইসব দিচ্ছেন মানুষ তারই পরিপ্রেক্ষিতে চলা দেখেন না।

সরকার বুঝতেই পারে না বৈষম্যটা মাথায় না হয় বলুন বৈষম্যটা হচ্ছে কিসের। কোনোভাবে তো ঠিক বুঝতে হবে।

এই ছাত্র জনতার ভাঙা হৃদয় সরকারকে সময়ের সময় দিতে হবে।

তারা চেনেনি কোনো ফ্যাসিস্ট, একনায়ক বা দুর্নীতিগ্রস্ত। তারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেছে। সংবিধান পড়েছে। তাদের বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকা সকল তন্ত্রকেই তারা বিদ্রোহের রাস্তায় রেখেছে এবং রাখবে।

কার্যনির্বাহী সম্পাদক: মোঃ আসাদুজ্জামান
সাবেক ছাত্র কর্মনির্বাহী
ও বর্তমান আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট, বাংলাদেশ

ছাত্র জনতার বিপ্লবের শততম দিন ও আমজনতার ভাবনা | Asaduzzaman